Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

মেদুয়া ইউনিয়নের আয়ের উৎস্য

আমাদের এই চরাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ কুষিজীবি ও মৎস্যজীবি কাজ করে জিবীকা নির্বাহ করে । এই বছর ২ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি ধানের চাষ করা হয় । এখন ধান কাটার মৌসুম প্রচুর পরিমান ধান হওয়া কৃষক দারুন খুশি। সবাই ব্যস্ত এখন ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে দারুন ব্যস্ত ।

ইরির মহাপরিচালক রবার্ট এস জিগলার ইরির ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানের আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা ও অতীতের অর্জন নিয়ে এ দেশের  কারণ তা না হলে হয়তো ইরির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইস নিয়ে আসার তোড়জোড় সম্পর্কে জানা যেত না। প্রথম আলোয় ১৬ জুলাই প্রকাশিত জিগলারের বেশ কিছু বক্তব্য এবং ইরি-সম্পর্কিত আলোচনার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করাই এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য। কারণ এর সঙ্গে বাংলাদেশের বীজ পরিসরের জীবন-মরণের প্রশ্নটি সরাসরি জড়িত।

 

পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তার জন্য ইরির তথাকথিত উচ্চফলনশীল ধানজাত প্রকল্পগুলোর প্রসঙ্গ টেনেছেন রবার্ট এস জিগলার। কিন্তু চরম খাদ্যসংকটে টালমাটাল পৃথিবীর খাদ্যনিরাপত্তার জন্য কোনোভাবেই উচ্চমাত্রার রাসায়নিক সার, বিষ ও সেচ গ্রহণশীল ‘উফশী’ ধানের ফলন বাড়ানো কোনো সমাধান হতে পারে না। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ, কিন্তু ধান উৎপাদন বেড়েছে আড়াই গুণ। তাহলে কেন বাংলাদেশে মানুষ খাদ্যহীন থাকছে? এ প্রশ্নের উত্তর একটাই, খাদ্য আপাদমস্তক একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যাপার। উৎপাদন বাড়লেই খাদ্যসংকট কমে না বা খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয় না। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে উৎপাদন-সম্পর্ক, নিয়ন্ত্রণ, বাজার এবং বণ্টন-ব্যবস্থাপনার রাজনীতি। হয়তো অনেকেরই জানা আছে, ‘ইরি’র মতো আন্তর্জাতিক কৃষিবিষয়ক গবেষণা এজেন্সিগুলো গড়ে তোলার পেছনে আছে ক্ষমতাধর বিশ্বরাজনীতি। যারা বরাবর ক্ষুধার বিরুদ্ধে সবুজবিপ্লব আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তির যুদ্ধের কথা বলে নিপীড়িত দুনিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।

জাপান ও তাইওয়ানে ১৯৪০-এর দশকে ‘উন্নত জাতের’ ধান বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়। তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ফিলিপাইনেও এই গবেষণা চলতে থাকে। ১৯৫০-এর দশকেই রকফেলার ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা এশিয়ার খাদ্য উন্নয়নের বিষয়টি গভীরভাবে মনোযোগে আনেন। যেহেতু ধান হচ্ছে এশিয়ার প্রধান খাদ্যশস্য, তাই রকফেলার ফাউন্ডেশনও ধান গবেষণায় আগ্রহী হয়। রকফেলার ফাউন্ডেশনের প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও কৃষি বিভাগের ওয়ারেন ওয়েভার এবং ডেপুটি পরিচালক জে. জর্জ হেরার ১৯৫২-৫৩ সালে এশিয়া ভ্রমণ করেন। পরে এশিয়ায় ইরি প্রতিষ্ঠার তোলার জন্য ফাউন্ডেশনের কাছে প্রস্তাব দেন।

ফিলিপাইনের লস বানুসে অবস্থিত ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি কলেজের ধান পরীক্ষণ মাঠকে কাজের সঙ্গে সংযুক্ত করে লস বানুসে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ইরি। মেক্সিকান নরিন ১০ গমের অভিজ্ঞতায় ইরির বিজ্ঞানীরা খর্বাকৃতির উচ্চফলনশীল ধান জাত উদ্ভাবনের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় দশ হাজার স্থানীয় ধানজাত সংগ্রহ করেন। ইরির প্রজননবিদ ও বিজ্ঞানীরা একটি বড় পরিসরে ধান প্রজনন কার্যক্রম শুরু করেন। খর্বাকৃতির ধানজাতের সঙ্গে লম্বাকৃতির ধানজাতের সংকরায়ণ ঘটিয়ে গবেষণা চলতে থাকে। ইন্দোনেশিয়ার একটি স্থানীয় ধানের জাত পেটা ডব্লিউ  যা ফিলিপাইনের বিভিন্ন এলাকাতেও জন্মায়, সেটি সংগ্রহ করা হয়। একই সঙ্গে চীনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা তাইওয়ানের একটি স্থানীয় খর্বাকৃতির ধানজাত ডি-জিও-উও-জেনকেও  সংকরায়ণের জন্য সংগ্রহ ও বাছাই করেন বিজ্ঞানীরা। দুই এলাকার দুটি স্থানীয় ধানজাতের সংকরায়ণের মাধ্যমে নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয় ইরিতে। ১৯৬৬ সালে ইরির মাধ্যমে এই নতুন ধান জাতটিকে এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়ার প্রদর্শনী খামারে উৎপাদনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

 

প্রজনন কার্যক্রম শুরুর মাত্র চার বছরের মাথায় এবং ইরি প্রতিষ্ঠার ছয় বছরের মাথায় ১৯৬৬ সালেই নতুন এই ধানজাতটিকে আইআর-৮ (ওজ-৮) নামে ছাড় দেয়। ১৯৬৭ সালে তখনকার পাকিস্তানের প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে ইরি-৮ ধানের চাষ হয়। ১৯৬৮ সালে ইরি-৮ ধানের চাষের এলাকা প্রায় ১০ লাখ একর ছাড়িয়ে যায়।

১৯৬৪ সালে ফোর্ড ও রকফেলার ফাউন্ডেশন ইরিকে যৌথ অংশীদারির ভিত্তিতে আর্থিক সহযোগিতা করতে চুক্তিবদ্ধ হয়। আইআর-৮ ধানটি পতঙ্গসহনশীল ছিল, ইন্দোনেশিয়াতে এটি মূলত বাদামি ঘাসফড়িংয়ের প্রতি বেশি সহনশীল ছিল। ১৯৬৬ সালে কৃষি যন্ত্রপাতির উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় এককালীন অনুদান হিসেবে (এই অনুদান বার্ষিক বাজেটবহির্ভূত) ইউএসএইড ইরিকে সাড়ে তিন লাখ ডলার সাহায্য দেয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৮ সালে ইউএসএইড ইরিকে আরও চার লাখ ডলার অনুদান দিয়েছিল।

ইরিকে অনুদান দেওয়ার জন্য এবং নতুন বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার জন্য এরপর নানান আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, বহুজাতিক কোম্পানি ও বহুজাতিক ব্যাংক ইরিকে অর্থ সহযোগিতা দিতে শুরু করে। তাদের নিজস্ব বাণিজ্য চাহিদা অনুযায়ী চলতে থাকে গবেষণা। ১৯৬৯ সালের ২৩ থেকে ২৫ এপ্রিল ইতালির বেলাজিও শহরের ভিলা সারবেলোনিতে ‘দি কনফারেন্স অন এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট’ শিরোনামে কৃষি উন্নয়নের পরিকল্পনা শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সিজিআইএআর প্রতিষ্ঠা। ১৯৬৯ সালে বিশ্বব্যাংকের তখনকার প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরদের একটি যৌথসভায় ইরির মাধ্যমে প্রবর্তিত সবুজবিপ্লবের তৎকালীন মারণাস্ত্র ‘উফশী বীজ’ সম্পর্কে বলেন,  এই সিজিআইএআর পরবর্তী সময়ে সারা পৃথিবীতে এককভাবে কৃষি এবং বীজ সীমানাকে নিয়ন্ত্রণ ও দখল করে নেয়।

কৃষির ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক সীমানা ছিন্নভিন্ন ও আপন বীজের বৈচিত্র্য রক্তাক্ত করেছে বাংলাদেশকেও। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানই স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ব্রি নাম ধারণ করে। ইরির পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্রি-এর মাধ্যমেই তথাকথিত সবুজবিপ্লবের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের কৃষি ইতিহাস ও কৃষি মনস্তত্ত্ব বদলে যেতে শুরু করে। দেশের প্রথম কৃষি সম্প্রসারণ সহায়িকার ভূমিকা অংশে শুরুতেই বলা হয়েছে, দ্রুত বর্ধিত জনসংখ্যা ও শিল্পায়নের ফলে দেশে প্রতিনিয়ত বেশি খাদ্য ও বাণিজ্যিক ফসলের চাহিদা বাড়ছে। এভাবে খাদ্য বণ্টন-ব্যবস্থাপনার সব রাজনীতিকে আড়াল করে কেবল ‘অধিক ফসল’ ফলানোর নাম করে দেশের ভিন্ন ভিন্ন কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলের জলবায়ুসহিষ্ণু ধানবৈচিত্র্যকে নির্মূল করা হয়েছে।

উফশী চাষের নামে বাংলাদেশের মাটিতেও টেনে আনা হয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সার-বিষ আর পানির অনিবার্য বাণিজ্য। বাংলাদেশের কৃষকেরা এখন যে ধান উৎপাদন করছেন, সেই ধানের বেশির ভাগ অংশের মালিক বিভিন্ন করপোরেট কোম্পানি। কৃষক কেবল ধানই ফলাচ্ছে না, তার রক্ত-ঘামেই টিকে আছে সিনজেন্টা, মনসান্টো, ডুপন্ট, কারগিল, বায়ার ক্রপ সায়েন্সের মতো করপোরেট কোম্পানির মুনাফার মেদ। কৃষক-জুমিয়া উদ্ভাবিত ও নিরন্তর বিকাশমান জাতগুলোর ভেতর কিছু ‘অদলবদল’ ঘটিয়ে ইরিপ্রবর্তিত ধানগুলোকেই ‘আধুনিক’ নাম দেওয়া হয়েছে। ইরির কৃষিবিষয়ক গবেষণা ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ও জনবরাদ্দ কমে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি এখন কেবল করপোরেট কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। ২০০৭ সালে ইরি ‘হাইব্রিড ধান গবেষণা কনসোর্টিয়াম’ গঠন করে এবং বার্ষিক ফির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত জাতগুলো করপোরেট কোম্পানির গবেষণার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। গত বছরের মার্চে   ইরি যুক্তরাষ্ট্রের বীজ কোম্পানি ডুপন্টের সঙ্গে হাইব্রিড বীজ গবেষণা ও বাণিজ্যিকীরণের জন্য একটি যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করে।